কোমরে ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার।

কোমরে ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার।

কোমরে ব্যাথার কারণ প্রতিকার।

কোমরে ব্যাথা, খুব কমন একটি সমস্যার নাম। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন জীবনে কোনও না কোনও সময় কোমরের ব্যাথায় আক্রান্ত হয়েছেন। এবং আমাদের ডাক্তার এর কাছে যখন রোগীরা আসে, তাদের সেকেন্ড মোস্ট কমন কমপ্লেন থাকে ব্যাক পেইন, এবং সবচেয়ে কমন যে ব্যাথা হয়ে থাকে সেটার নাম হলো মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। আজকে আমি আপনাদের সাথে ব্যাকপেইন নিয়ে চারটি বিষয় আলোচনা করব।

কোমরে ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার।








 ★প্রথমত আমি বলবো কী কী উপসর্গ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনিমেকানিক্যাল ব্যাকপেইনে ভুগছেন।

দ্বিতীয়ত আপনি কিভাবে বাসায় পাঁচ টি স্টেপস ফলো করে এটার ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন।

তৃতীয়ত কি পাঁচটি স্টেপ ফলো করে আপনি এই ব্যথাটা প্রতিরোধ করতে পারেন।

চতুর্থত কোমর ব্যথার সাথে কী কী উপসর্গ থাকলে আপনি ডাক্তারের সাথে খুবই জলদি পরামর্শ করবেন।

প্রথমে আসি মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন:— মেকানিক্যাল ব্যাকপেইনের মূলত পাঁচটি উপসর্গ আছে।

/ এই ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং ঝুঁকি অথবা ভারী কিছু জিনিস উঠানোর পর থেকে ব্যথাটা হঠাৎ করে শুরু হয়।

/ ব্যথাটা থাকে কোমরের নীচের অংশে অথবা পায়ের উপরের অংশে এবং ব্যাথাটা কখনওই পায়ের হাঁটুর নীচ পর্যন্ত যায় না।

/ ব্যথাটা যখন হয় তখন দেখা যায় আপনি যখন কাজকর্ম করবেন তার সাথে সাথে ব্যথাটা বাড়ে এবং রেস্ট নিলে ব্যথা কমে যায়।

/ আপনি অনুভব করবেন যে ব্যথাটা মাঝে মাঝেই হয় আমরা এটাকে বলি "রিকারেন্ট পেইন" গবেষণায় দেখা গেছে আপনার একটি পেইন এপিসোড হওয়ার পরে 40% পসিবিলিটি থাকে ছয় মাসের মধ্যে আপনার আরেকটি পেইন এপিসোড হওয়ার।

/ প্রগনোসিস, এই ব্যথার প্রগনোসিস খুবই ভালো। দেখা যায়, 30 ভাগ মানুষ দুই দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান, এবং 90 ভাগ মানুষই সাধারণত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থতা লাভ করে, আর 10 ভাগ মানুষ যারা বাদ থাকে তাদের দেখা যায় যে, ব্যাথা অনেকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং তাদের কোন এক সাইকোলজিক্যাল কনফ্লিক্ট থাকতে পারে।

যেমন কাজে সমস্যা অথবা পারিবারিক সমস্যা, স্ট্রেস অ্যাংজাইটি। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে  

কোমরে ব্যাথার চিকিৎসা।

এবার আসি ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে, তার আগে একটু বলতে চাই যে, এই মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন নিয়ে আমাদের আসলে কোনও তদন্তের প্রয়োজন নেই। যেমন এমআরআই, এক্সরে বা সিটি স্ক্যান, ইত্যাদি। এবার আমি এই ব্যাকপেইন নিরাময়ের জন্য পাঁচটি চিকিৎসা সম্পর্কে বলব, এটা আপনি বাসায় বসে নিয়মিত করলে আপনার এই ব্যাথাটা আপনি নিরাময় করতে পারেন।

/ বেড রেস্ট। এক সময় দেখা গেছে যে, বেডরেস্ট ছিল এই মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন এর সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। কিন্তু আলটিমেটলি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি আপনি বেশী রেস্ট নেন, তখন উপকারের থেকে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য আমরা রোগীদের বলি ব্যাথা কিছুটা কন্ট্রোলে আসলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি আপনার রেগুলার কার্যক্রমের ফেরত যাবেন।

/ মাসাজ অথবা হিট আর কোল্ড কম্প্রেশন। এটা যদিও সায়েন্টিফিক প্রুফ না, তবে অনেক রোগী ঠান্ডা বা গরম সেঁক ব্যবহার করে এর উপকারিতা পেয়েছেন। সেজন্য আপনি এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

/ কোন লাম্বার সাপোর্ট অথবা ট্র্যাকশন। এটাও খুব অল্প কিছু ছোট ছোট স্টাডি তে এটা উপকারিতা পাওয়া গেছে তো আপনি হেল্প নিতে পারেন।

/ ওষুধ আমরা সাধারণত দু ধরণের ওষুধ দিয়ে থাকি। এক হল ব্যথানাশক ওষুধ আপনি প্যারাসিটামল খাবেন প্যারাসিটামলের ব্যথা না কমলে আপনি একটু স্ট্রং পেনকিলার খাবেন যেমন, আইবুপ্রোফেন অথবা ইন্ডোমিথাসিন।তবে এখানে বলে রাখা প্রয়োজন আপনি যদি ডায়াবেটিক,কিডনির সমস্যা, হাঁপানি রোগ অথবা অন্য কোনও অসুখ থেকে থাকে। তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলেই স্ট্রং পেনকিলার খাবেন এই ব্যথানাশক ওষুধ ছাড়া আরেকটা ওষুধ সেটা হল muscle relaxant কারণ ব্যাক পেইন যখন হয় তখন দেখা যায় আমাদের কোমরের মাংস শক্ত হয়ে থাকে, ক্ষেত্রে muscle relaxant দিলে ব্যাথা কিছুটা কমে যায়।

/ ফিজিকাল থেরাপি আপনার ব্যথা যদি ছয় সপ্তাহের বেশি হয় তখন আমরা কিছু রশ্মি অথবা স্পেশ্যাল কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে এই চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তখন আমরা কোনও ফিজিওথেরাপিস্ট, ফিজিক্যাল মেডিসিন, স্পেশালিস্টদের হেল্প নিয়ে থাকি। এটা ধরনের, আপনার যখন ব্যথা হল তখন আপনি এই জিনিসগুলো করলেন। এরপর আমি পাঁচটি ধাপের কথা বলব যেগুলো আপনি নিয়মিত পালন করলে আপনি ব্যথা প্রতিরোধ করতে পারেন।

কোমরে ব্যাথার কারণ প্রতিকার।

 আপনার কি কারণে ব্যথাগুলো হয়ে থাকে? এই সম্পর্কে জানলেই আপনার ব্যথা প্রতিরোধ করা খুব সহজ হবে। / ব্যাক পোস্টার, আজকাল দেখা যায় আমরা অনেকেই অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটারে অথবা ফোনে কাজ করে থাকি, অথবা অনেকটা সময় সোফায় বসে বা শুয়ে টিভি দেখি, এতে হয় কী আমরা অনেক সময় কুজু হয়ে থাকি যার জন্য আমাদের পিঠে চাপ পড়ে, এই পোস্টারটি আমাদের চেঞ্জ করতে হবে। আমরা যখন বসে কাজ করব, তখন আমরা যেনো সোজা হয়ে বসি দরকার হলে পিছনে কিছুটা সাপোর্ট দিয়ে বসতে পারি এবং অনেকক্ষণ না বসে একটু গ্যাপ দিয়ে যেমন কিছু ক্ষণ কাজ করলেন, আবার উঠে হাঁটলেন, আবার বসে কাজ করলেন এভাবে আমরা গ্যাপ দিয়ে কাজগুলো করতে পারি।

/ সামনে বা পিছনে অতিরিক্ত ঝুঁকে কোনও কাজ করবেন না। কারণ এক্ষেত্রে আমাদের পিঠে মাংসের উপর চাপ প্রয়োগ হয়।

/ ওয়েট লিফটিং টেকনিক, এটা হল আপনি যখন ভারী কিছু জিনিস মাটি থেকে উঠবেন আপনি পা ভাঁজ করে নীচে বসবেন, জিনিসটা ধরবে তার পরে সোজা হয়ে উঠবেন। এতে করে পায়ের উপর চাপ পড়বে, কিন্তু আপনার পিঠে মাংসের উপর চাপ প্রয়োগ হবে না।

/ আপনার যদি ওজন বাড়তি হয়ে থাকে তাহলে ওজন কিছুটা কমাতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ওজন আমাদের পিঠের মাসেল কে উইক করে ফেলে।

/ আমাদের পিঠে মাসেল কে স্ট্রং করার জন্য আমাদের কিছু এক্সারসাইজ করতে হবে। যেগুলোকে আমরা বলি "ব্যাক স্ট্রেন্থিনিং" একসারসাইজ। আপনি কোনও ফিজিওথেরাপিস্ট জিম ইনস্ট্রাক্টর, ম্যাগাজিন অথবা ইন্টারনেট থেকে ব্যাপারে হেল্প নিতে পারেন।আপনি যদি এই পাঁচটি স্টেপগুলো ফলো করেন তাহলে আপনি লো ব্যাক পেন থেকে অবশ্যই মুক্তি পাবেন।

কোমরে ব্যাথার উপসর্গ।

এবার আমি কিছু উপসর্গের কথা বলব, যেগুলো আপনার খুব মনযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। এগুলো হচ্ছে রেড ফ্ল্যাগ সাইন। আপনার ব্যাক পেনের সাথে এই সমস্যাগুলো যদি থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেবেন।

. নম্বর হল আপনার ব্যাথাটা কোনওভাবেই সারছে না এবং দিনে দিনে ব্যথাটা বেড়ে চলেছে এবং এমন এক পর্যায়ে গেছে যে আপনার রাতে ঘুমও হচ্ছে ব্যথার জন্য।

. আপনার কোনও ট্রমার হিস্ট্রি আছে। যেমন পিঠে কোনও ব্যথা পেয়েছেন অথবা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, এরপর ব্যথা শুরু হল।

. আপনার বয়স যদি 20 বছরের নীচে অথবা 55 বছর বয়সে উপরে হয়, যখন ব্যথাটা শুরু হল।

. ব্যথা সাথে সাথে আপনার এক পা অথবা দু পা দিন দিন অবশ হয়ে যাচ্ছে অথবা মাংস শুকিয়ে যাচ্ছে এগুলো একটা ওয়ার্নিং সাইন।

. আপনার গোপনাঙ্গ আছে সেখানে আপনি অবশ অনুভূতি ফিল করছেন অথবা আপনার প্রস্রাব আটকে গেল অথবা মলদ্বারের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেন, এগুলো একটা ওয়ার্নিং সাইন।

. আপনি যদি ক্যানসারের রোগী অথবা অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড খাচ্ছেন অথবা হার ক্ষয়জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেবেন। ছাড়াও আরও কিছু লক্ষ্মণ আমাদের খুব খেয়াল করতে হবে, যদি আপনার ব্যাক পেনের সাথে জ্বর অথবা ওজন কমে যাওয়া অথবা অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে, ধরনের সমস্যা থেকে থাকে। আমরা ব্যাক পেন সম্পর্কে মোটামুটি একটা আইডিয়া পেলাম যে, সবচেয়ে কমন ব্যাক পেইন কী কারণে হয়ে থাকে এবং কীভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আজকে এই পর্যন্তই, সামনে আবারও আসবো নতুন কোন হেলথ্ টিপস নিয়ে।

ধন্যবাদ সবাইকে

 

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url