ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু কৌশল এবং প্রতিরোধের সহজ উপায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু কৌশল এবং প্রতিরোধের সহজ উপায়।
আসসালামু আলাইকুম। প্রথমে আপনাদের সাথে একটু পরিচিত হয়ে আমি ডাক্তার ডালিয়া সুলতানা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি। আজ আপনাদের আমি বলব, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু কৌশল এবং প্রতিরোধের সহজ কৌশল।
ডায়াবেটিস রোগটা কি ?
আসলে প্রথমে আমরা জেনে নিই ডায়াবেটিস রোগটা কি ?ডায়াবেটিস হচ্ছে একটি হরমোনের অভাবজনীত রোগ আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় নামক একটি গ্রন্থ আছে সেখান থেকে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন তৈরি হয়া সেই হরমোনের অভাব বা তার কর্ম ক্ষমতা হ্রাসের কারণে ডায়াবেটিস রোগটি হয়ে থাকে। অনেকেই মনে করেন যে ডায়াবেটিস সারাজীবনের একটি রোগ খুবই হতাশ হয়ে যায়। তারা মনে করে এই রোগটি নিরাময় যোগ্য না। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। তাহলে আমরা প্রথমেই জেনে নিই ডায়াবেটিস রোগকে প্রতিরোধ কী ভাবে করব।
ডায়াবেটিস রোগকে প্রতিরোধের সহজ উপায়।
অনেক রোগী এসে বলে যে ম্যাডাম আমার পরিবারে আমার বাবা মার ডায়াবেটিস ছিল। কাজেই আমি তো এই রোগে আক্রান্ত হব এটাই আমার নিয়তি। কিন্তু কথাটা সম্পূর্ণ রূপে ঠিক না।একজন রোগী ডায়াবিটিস হওয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক বা বংশগত কারণ যেমন জড়িত, ঠিক তেমনি ভাবে এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর বা পরিবেশতগত কারণ জড়িত। বর্তমানে ডায়াবেটিস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে তার কারণ হচ্ছে এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর চেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে একজন রোগীকে ডায়াবেটিস যাতে না হয় সে জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে, যেমন তার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমি আবারও বলছি, প্রথমত তার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।তাঁকে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা থাকা যাবে না এবং তাঁর খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা সাধারণত এই সাউথইস্ট এশিয়ান কান্ট্রি মানুষজন শর্করা প্রধান খাদ্য খেয়ে থাকি। এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভাস। আমরা এক প্লেট ভাত খাই, সাথে সবজিটা একটু বেশি হবে, প্লেটের হাফ থাকবে সবজি বাকি যে হাফ থাকবে তাঁর হাফ হচ্ছে ভাত আর বাকি হচ্ছে প্রোটিন জাতীয় খাবার। কাজেই এ ভাবে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন শারীরিক শ্রম করা।এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমেই একজন মানুষের ডায়াবেটিস রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এখন এত কিছুর পরেও আপনার ডায়াবেটিস হয়ে গেল। তাহলে ডায়াবেটিস হওয়ার পরে এই ডায়াবেটিক তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কীভাবে আমরা ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করব।
কীভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব সেটা একটু খুব সহজে বলি। আপনার যখন ডায়াবেটিস হল এই রোগটার সাথে আপনাকে সারা জীবন বসবাস করতে হবে সে আপনার একজন শত্রু একজন শত্রুর সাথে যখন আপনাকে থাকতে হবে তাহলে সে আপনার কী কী ক্ষতি করতে পারে এই জিনিসগুলো আপনাকে খুব ভালোমতো জানতে হবে। ডায়াবেটিস হলে যেটা হয় ইনসুলিন রক্তের গ্লকোজ থাকে সেলে ঢুকতে পারে না। যার ফলে রক্তের মধ্যে গ্লকোজটা ঘুরতে থাকে এবং রক্তের মধ্যে যখন গ্লকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, রক্তনালীগুলি ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে দেখা যায় যে হার্টের সমস্যা হচ্ছে সিডি বা স্ট্রোক হচ্ছে, কিডনিতে সমস্যা হচ্ছে ,চোখে রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পায়ের রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে পায়ের আঙুল কেটে ফেলতে হচ্ছে। এই সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে যার ফলে আমাকেই আবেগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের প্রথমেই জেনে নিতে হবে ডাক্তারের কাছে ৷
ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা কত রাখতে হবে।
একজন রোগীর ক্ষেত্রে একেক রকম। তবে সাধারণত একজন পার্সন এর ক্ষেত্রে আমরা বলি খালি পেটে ছয় রাখতে হবে এবং খাওয়ার 2 ঘণ্টা পরে। শর্করার মাত্রা আট রাখতে হবে এবং ঘর সুগার যেটা আমরা বলি বা এইচবিএওয়ানসি সেটা সাত পারসেন্ট রাখতে হবে। এখন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কী করতে হবে খুব সহজ উপায়ে আপনি শুধুমাত্র ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ উপায় না। কাজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের ১00% নিয়ম মানতে হবে। সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মধ্যে যেতে হবে। প্রতিদিন সকালে আপনি হাঁটবেন এবং এমন না যে আপনি একদিন হাঁটলেন 3 দিন ঘুমিয়ে থাকেন বা একদিন অল্প হাঁটলেন। আরেকদিন অনেক বেশি হাঁটেন তা না নির্দিষ্ট সময় প্রতিদিন আপনাকে হাঁটতে হবে যে প্রতিদিনই 40 মিনিট হাঁটব এবং সেটা আনন্দের সাথে করতে হবে। শারীরিক শ্রম টাকেউ যদি হাঁটতে পছন্দ না করে সাঁতার কাটতে পারে সে সাইকেল চালাতে পারে।
থাকে
শারীরিক শ্রম করতে হবে। তারপরে
হলো খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি,
খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। খাদ্যাভাস
পরিবর্তন, শর্করা খাবারটা।পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। আমরা
অনেক সময় বলে দেই যে আপনি
দু বেলা রুটি খাবেন।
অনেকে হয়ত বা রুটি
পছন্দ করে না বা
রুটি খেতে চাচ্ছে না।
তার মানে কি তার
ডায়াবেটিস কখনও নিয়ন্ত্রণ হবে
না?
তা না তার ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি ভাত
খায় সেটা পরিমিত পরিমাণে
খেতে হবে। রুটির বদলে
ভাত খেতে পারে সেটা
কোন সমস্যা না, কিন্তু সেটা
নির্দিষ্ট
পরিমাণে খেতে হবে। আমি
সাধারণত রোগীদের যেটা বলি আপনার
বাসায় ভাতের প্লেট টা আছে সেটা
কে আপনি চেঞ্জ করে
ফেলেন। মানে সাইজে ছোট প্লেট নিয়ে
একসাথে সবাই বসে টেবিলে
খান। টিভি দেখতে দেখতে
খাওয়া যাবে না তাহলে
অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ সাধারণত হয়ে যায়। এজন্য
একসাথে টেবিলে বসে সবাই খেতে
হবে ।
এবং
সেখানে খাবারের যেটা বললাম হাফ
থাকবে। সবজি বা কী
ওয়ান ফোর্থ হচ্ছে ভাত আর ওয়ান
ফোর্থ হচ্ছে প্রোটিন জাতীয় খাবার। এছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের আরেকটা বিষয় আছে সে
বলে ম্যাডাম আমার তো রিজিক
নষ্ট হয়ে গেল। আমার
ডায়াবেটিস হয়েছে আমি আর কোনও
ভালোমন্দ খেতে পারব না।
কথাটা সম্পূর্ণ ভুল।
একজন ডায়াবেটিক রোগী আর একজন নন ডায়াবিটিক রোগী খাদ্যাভাসে খুব বেশি কোনও পরিবর্তন নয়, যেমন ধরেন একজন নন ডায়াবেটিক পার্সন হাইট ওয়েট অনুযায়ী উনি যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে পারবেন একজন ডায়াবেটিক রোগী ও তার হাইট ওয়েট অনুযায়ী সেই পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে বা নন ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে সবার ক্ষেত্রেই আমাদের সাধারণত ছয়বারে খাবারের ভাগ করে খাওয়া উচিত।
তিনবার
মেন খাবার সকাল দুপুর রাত
এবং সকাল 11:00 থেকে 1:00 হালকা নাস্তা বিকাল পাঁচ টার দিকে
হালকা নাস্তা এবং রাতে ঘুমানোর
আগে হালকা খাবার মানে একজন ডায়াবিটিক
রোগী কখনও রাত 12:00 টার
সময় ডিনার খেতে পারবেন না।
তার পরে যখন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসে
তখন তাঁকে ড্রাগ বা ওষুধ দিবে
সেই ওষুধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে ডক্টর, কিন্তু
তাতে সহায়তা করতে হবে রোগীদেরকে।
একজন
পেশেন্ট গ্লকোমিটার কিনে নিতে হবে
যাতে তিনি বাসায় তাঁর
ব্লাড সুগার টা সপ্তাহে অন্তত
একদিন চেক করতে পারেন।
সপ্তাহে অন্তত একদিন চেক করলে সেটা
কী রকম থাকবে সেটা
ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসবেন।
এবং তিন মাস পর পর
ডাক্তারের কাছে কখন আসবেন
উনি ওনার ওষুধের মাত্রা
ঠিক করে নেবেন। এ
ভাবে একজন রোগী তাঁর
ডায়াবিটিস থাকে সম্পূর্ণ রূপে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এখানে ডাক্তার শুধুমাত্র তাকে সহায়তা করবেন
তাঁকে গাইড করবেন। কিন্তু
সম্পূর্ণ কাজটাই পেশেন্টকে করতে হবে।
তাঁর নিয়ম কানুন মেনে একজন রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। একজন রোগী যদি তাঁর ডায়াবেটিক সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, তাহলে একজন নন ডায়াবেটিক রোগী এবং ডায়াবেটিক রোগী একই সমান সময় সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।
ধন্যবাদ।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url