স্বামী-স্ত্রীর হক ও অধিকার সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস
স্বামী-স্ত্রীর হক ও অধিকার সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস
হাদীস- ১ : হাকীম বিন মু'আবিয়া রা. স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা . করেন, একদা আমি হুজুরের খেদমতে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের কী কী হক রয়েছে? উত্তরে নবীজী সা. ইরশাদ করলেন,
১. যখন তোমরা খানা খাবে স্ত্রীকেও খাওয়াবে।
২. যখন পরিধান করবে স্ত্রীকেও পরিধান করাবে।
৩. (স্ত্রী থেকে কোনো অন্যায় প্রকাশ পেলে শাসনমূলক) তার মুখের উপর আঘাত করবে না। । আর বিনা অন্যায়ে মারধর করার তো প্রশ্নই আসে না।)
৪. তাকে অভিশাপ দেবে না ।
৫. সম্পূর্ণরূপে তার সাথে মেলামেশা ছেড়ে দেবে না। হ্যাঁ! সংগত কারণে ঘরের অভ্যন্তরে শয্যা পৃথক করতে পার। (কিন্তু রাগ করে তাকে একাকী ঘরে রেখে বাইরে রাত যাপন করো না।)
-আবুদাউদ শরীফ (মিশকাত শরীফ-২৮১পৃ.) হাদীস- ২ :
আব্দুল্লাহ বিন যাম'আ রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন স্বীয় স্ত্রীকে দাসীর মতো মারধর না করে। হতে পারে দিন শেষে রাতের বেলা দৈহিক চাহিদা পূরণের জন্য তার সাথে মিলিত হবে। (অর্থাৎ ইহা কেমন কথা যে, দিনের বেলা নিষ্ঠুরের মতো তাকে মারধর করলে, আর রাতের বেলা দৈহিক মিলনের জন্য তার প্রতি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়লে!)
—বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী শরীফ হাদীস- ৩ :
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে মহিলাদের সাথে সদ্ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছি; তোমরা তা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতি পাঁজরের বক্র হাঁড় দ্বারা সৃষ্ট। যদি তাকে সম্পূর্ণ সোজা করতে চাও, তবে তাকে ভেঙ্গে ফেলবে। আর ভেঙ্গে ফেলার অর্থ হল তালাক দেয়া। (অর্থাৎ তাকে সম্পূর্ণ নিজের
মন-মেযাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চাইলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, পরিশেষে তালাকের দিকে পা বাড়াবে।) আর যদি তাকে নিজ অবস্থার উপর ছেড়ে দাও, তবে তা বক্রই থেকে যাবে। (তাই একেবারে কিছু না বলে এমনিই ছেড়ে দেয়া যাবে না।) এজন্য আমার পক্ষ থেকে তোমরা তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার উপদেশ গ্রহণ কর ।
—বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী শরীফ (মিশকাত শরীফ-২৮০পৃ.) হাদীস- ৪ :
হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, একদা আমি এবং মায়মূনা রা. রাসূল সা. এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে অন্ধ সাহাবী (হযরত) আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. আগমন করলেন। রাসূল সা. আমাদেরকে তৎক্ষণাৎ পর্দার আড়ালে চলে যেতে বললেন। আমরা আরজ করলাম, আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. তো অন্ধ; তিনি তো আমাদেরকে দেখবেন না এবং চিনবেনও না। রাসূল সা. বললেন, তোমরাও কি অন্ধ যে তোমরা তাকে দেখতে পাবে না ?
-তিরমিযী ও (আবুদাউদ শরীফ-৫৬৮পৃ.)
ফায়দা : স্ত্রীর হকসমূহের মধ্য থেকে এটাও একটি হক যে, তাকে বেগানা পুরুষ থেকে এমনভাবে পর্দা করানো, যেন সে কোনো বেগানা পুরুষকে দেখতে না পায় এবং বেগানা পুরুষরাও যেন তাকে দেখতে না পায়। এতে স্ত্রীর দ্বীনের হেফাজতের পাশাপাশি বেপর্দার কুফল থেকে সুরক্ষা হয় এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। আর তা দাম্পত্য-হক ও অধিকার আদায়ে বিরাট সহায়কও বটে ।
হাদীস- ৫ :
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, যদি আমি কাউকে সেজদা করার অনুমতি দিতাম তবে নারীদেরকে তাদের স্বামীকে সেজদা করার আদেশ দিতাম। (স্ত্রীর উপর স্বামীর কতো বড় হক, তা এ হাদীস থেকে অনুমেয়।)
-তিরমিযী শরীফ (মিশকাত শরীফ-২৮১পৃ.) হাদীস ৬ :
হযরত ইবনে আবি আওফা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, শপথ ওই সত্তার, যাঁর মহা শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, যতক্ষণ নারীরা নিজেদের স্বামীর হক আদায় করবে না, ততক্ষণ তারা বিধাতার হকও সম্পাদন করতে পারবে না। –ইবনে মাজা'
ফায়দা : অর্থাৎ কোনো নারী যেন শুধু নামায-রোযা আদায় করতঃ এ কথা ভেবে চুপচাপ বসে না থাকে যে, আমি তো আল্লাহর হক ও হুকুম আদায় করছি (আমার আর কী করণীয় আছে?)। না, এতেই আল্লাহর হক শেষ নয় যতক্ষণ স্বামীর হকও আদায় না করবে। কেননা স্বামীর হক তো স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া বিধান। তাই স্বামীর হক আদায় করা ছাড়া আল্লাহর হক আদায়ে পূর্ণতা আসবে না ।
হাদীস- ৭ :
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, একদা আমি হুজুরের খেদমতে আরজ করলাম, কোন্ নারী সবচেয়ে উত্তম? উত্তরে বললেন ওই নারী সবচেয়ে উত্তম, যার দিকে তাকালে স্বামীর মন ভরে যায়। (অর্থাৎ, যে নারীর মধুর হাসি, টানা-চোখের চাহনি, হৃদয়গ্রাহী অঙ্গভঙ্গি ও বুকভরা ভালোবাসাপূর্ণ রসালাপ দ্বারা স্বামীর হৃদয়সাগরকে কানায় কানায় ভরে দেয়।) যখন কোনো কাজের আদেশ দেয় তখন তা পালন করে। স্বীয় মাল-সম্পদ ও ব্যক্তিসত্ত্বার মাঝে এমন কোনো কাজ করে না, যা স্বামীর অসন্তুষ্টির কারণ হয় ।
-নাসাঈ শরীফ (মিশকাত শরীফ-২৮৩পৃ.)
ফায়দা : দেখুন! স্বামীর সন্তুষ্টি ও আনুগত্যের মাঝে কেমন উপকারিতা নিহিত রয়েছে। দ্বীন-দুনিয়ার পরিপূর্ণ সাফল্য তখনই অর্জিত হবে, যখন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে নিগূঢ় ভালোবাসা ও মহব্বত স্থাপিত হবে। আর নিগূঢ় ভালোবাসা তখন স্থাপিত হবে, যখন পারস্পরিক হক ও অধিকার আদায়ে উভয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে শরীয়তের পক্ষ থেকে সেসব হক আদায়ের প্রতি কঠোর নির্দেশও রয়েছে যখন, তখন তো আর তাতে উদাসীন থাকার যুক্তিকতা নেই ।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url