যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম
আচ্ছালামু আলাইকুম NEW NCP এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম নিয়ে আলোচনা করব।
যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম
মানব বংশের স্থিতি ও বৃদ্ধি এবং মনের স্বাভাবিক প্রশান্তি ও স্বস্তি একান্তভাবে নির্ভর করে স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনের ওপর। কুরআন মজীদ এ মিলনকে সমর্থন করেছে এবং তাকে জরুরী বলে ঘোষণা করেছেন । এ মিলন স্পৃহাকে অস্বীকার করা, কিংবা নির্মূল করে দেয়া কুরআনের দৃষ্টিতে অপরাদ এতে কোন সন্দেহ নেই ।
কিন্তু যৌন মিলন সংস্থাপনের ব্যাপারে
কুরআন মজীদ যেসব মেয়ে- এবং পুরুষের মাঝে বিয়ে সম্পর্ক স্থাপন হারাম করে দিয়েছে, তার ভিত্তি হচ্ছে তিনটিঃ বংশ-সম্পর্ক, দুগ্ধপানের সম্পর্ক এবং বৈবাহিক সম্পর্ক।
১. বংশ-সম্পর্কের কারণে মা-বাপের দিক দিয়ে যেসব আত্মীয়তার উদ্ভব হয় তা মোটামুটি সাতটিঃ মা, ঔরসজাত কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, বোনঝি। যে-কোন পুরুষের পক্ষেই তার এ ধরনের আত্মীয়া মহিলাকে বিয়ে করা চিরদিনের তরে হারাম। আর এ হারামের কারণ হচ্ছে এই বংশ-সম্পর্ক। কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতে এ সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ
حرمت عليكم امهتكم و بنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاختِ
(النساء : ٢٣)
তোমাদের জন্য় যে সব মেয়েদেরকে বিয়ে করা হারাম করে দেয়া হয়েছে তোমাদের প্রতি, তোমাদের মা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, তোমাদের ভাইয়ের কন্যা এবং বোনের কন্যা।
মা বলতে এখানে এমন সব মেয়েলোককে বোঝায়, যার সাথে প্রকৃত মা এবং বাবার দিক দিয়ে জন্ম ও রক্তের সম্পর্ক রয়েছে আর এ সম্পর্কের সূচনা হয় দাদি ও নানি থেকে । অতএব তাদের বিয়ে করাও
হারাম
কন্যা বলতে এমন সব মেয়েও বোঝাবে, যাদের সাথে স্বীয় ঔরসজাত কন্যা বা পুত্রের দিক দিয়ে সম্পর্ক রয়েছে। আর বোনের মধ্যে শামিল সেসব মেয়েও, যার সাথে বাপ কিংবা মা অথবা উভয়ের সমন্বয়ে বোনের সম্পর্ক হতে পারে। ফুফু বলতে এমন মেয়ে লোকও বোঝায়, যে বাবার কি তার বাবার মানে দাদার বোন।। আর ‘খালা'র মধ্যে এমন সব মেয়েলোকও শামিল, যার সাথে রক্তের
যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম
সম্পর্ক রয়েছে মা কিংবা দাদার দিক দিয়ে। বোনঝি বলতে এমন সব মেয়েই বোঝায়, যাদের মায়ের সাথে রক্তের দিক দিয়ে বোনের সম্পর্ক হতে পারে। এ মোট সাত পর্যায়ের মেয়েলোক ও পুরুষ লোক পরস্পরের জন্যে মুহাররম। এদের পারস্পরিক বিয়ে হারাম। একথা সর্বজনসমর্থিত—কোন মতভেদ নেই এতে। কেননা কুরআন বলে এদেরকেই স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করা হয়েছে ।
২. দুধ পানের সম্পর্কেও কিছু সংখ্যক মেয়ে- এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম। ছেলে বা মেয়ে দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় যদি অপর কোন মহিলার দুধ পান করে, তবে সে মহিলা হবে তার দুধ-মা, তার স্বামী হবে এর দুধ-বাপ । এ দুধ-মা ও বাপের সাথে বিয়ে সম্পর্ক স্থাপন দুধ পানকারী পুরুষ বা নারীর জন্য হারাম, যেমন হারাম প্রকৃত মা বোনের সাথে বিয়ে ।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দোধ-বোনও হারাম করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে দুধ-মা ও দুধ-বোন উভয় সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা হয়েছেঃ
وامهتكم التى ارضَعْنَكُم وَاَخَوَاتُكُمْ مِنَ الرَّضَاعَةِ - (النساء: (٢٣)
এবং তোমাদের স্তনদায়িনী মা-দের এবং তোমাদের দুধ-বোনদেরকে বিয়ে করা সম্পুর্ন রুপে আল্লাহ তায়াআলা তোমাদের জন্যে হারাম করে দিয়েছেন।
تنزل منزلَةَ الام فتحرم على المرضع هى وكل من يحرم على الابنِ مِن قِبَلِ امِ النسب ربداية المجتهد : ج ، ص۳۵)
মোটামুটিভাব বংশ সম্পর্কের কারণে যাকে বিয়ে করা হারাম, দুধ পানের কারণেও তাকে বিয়ে করা হারাম হওয়া সম্পর্কে সব ফিকাহবিদই সম্পূর্ণ একমত অর্থাৎ স্তনদায়িনী আপন মায়ের সমান পর্যায়ে গণ্য হবে। অতএব বংশের দিক দিয়ে ছেলের প্রতি হারাম যাকে যাকে বিয়ে করা, দুগ্ধদায়িনীর
পক্ষেও সে হারাম।
দুধ বোন সম্পর্কে আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ
দুধ-বোন সে, যাকে তোমার মা তোমার বাবার কাছে থেকে পাওয়া দুধ সেবন করিয়েছে, তা তোমার সাথে এক সঙ্গেই সেবন করুক, কি তোমার পূর্বে বা তোমার পরে—ছেলে হোক আর মেয়ে
হোক ।
এজন্যে হযরত আশেয়া (রা) সব সময় বলতেনঃ
حرموا مِنَ الرَّضَاعَة مَا تُحْرِمُونَ مِنَ النَّسَبِ - (مسلمج ( )
তোমরা দুধ পানের কারণে তাকে হারাম মনে করবে, যাকে যাকে হারাম মনে কর বংশের কারণে।
যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম
বৈবাহিক সম্পর্কের দিক দিয়েও কোন কোন আত্মীয়ের সাথে বিয়ে সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয়ে যায়। এ হারাম দু'প্রকারের । এক, স্থায়ী—যেমন স্ত্রীর মা, পুত্রের স্ত্রী, যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এমন স্ত্রীর কন্যা এবং পিতার স্ত্রী ।
পিতার স্ত্রী সম্পর্কে কুরআন মজীদে স্পষ্ট নিষেধবাণী উচ্চারিত হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
ما نكح اباؤكم من النساء - النساء (۲۲) وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آيَاو
তোমাদের পিতারা যাকে যাকে বিয়ে করেছে, তাকে তাকে তোমরা বিয়ে করো না ।
এর কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে স্বয়ং কুরআনেই বলা হয়েছেঃ
إِنه كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتا- وَسَاءَ سَبِيلا - (النساء :٢٣)
পিতার বিয়ে করা স্ত্রীকে বিয়ে করা অত্যন্ত লজ্জাকর ও জঘন্য কাজ, গুনাহের ব্যাপার এবং বিয়ের খুবই খারাপ পথ।
আর পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে নিষেধবাণী দিয়েছেন তা হচ্ছেঃ
وَحَلَائِلُ أَبْنَاءِ كُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ - (النساء:۲۳)
তোমাদের আপন ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরও হারাম করা হয়েছে ।
এবং তোমাদের সেসব স্ত্রীদের—যাদের সাথে তোমাদের যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে—গর্ভজাত মেয়েরাও হারাম ।
যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম
فإن لم تكونوا دخلتم بهن فلا جناح عليكم - (النساء : ۲۳)
আর তোমরা যদি বিয়ে করা স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত না করে থাকো, তবে তার কন্যাকে বিয়ে করায় কোন দোষ নেই।
এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে রুশদ আল-কুরতুবী লিখেছেনঃ
এই চারজন ব্যক্তির মধ্যে দুজন হারাম হয়ে যায় বিয়ের আক্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই—তারা হচ্ছে পিতার স্ত্রী পুত্রের জন্যে , আর পুত্রের স্ত্রী পিতার জন্যে হারাম, আর একজন হারাম হয় স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পরে-সে হচ্ছে স্ত্রীর অপর এক স্বামীর নিকট থেকে নিয়ে আসা কন্যা।
আর দ্বিতীয় অস্থায়ী ও সাময়িক।
যেমন স্ত্রীর বোন, স্ত্রীর ফুফু, খালা, ভাইঝি-বোনঝি ইত্যাদি । স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় স্ত্রীর এসব নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করা ও একত্রে এক স্থায়ী স্ত্রীত্বে বরণ করা আল্লাহ তায়ালা সম্পুর্ন রুপে হারাম করে দিয়েছেন। এ কথার ভিত্তি হচ্ছে নিম্নোক্ত আয়াতাংশঃ
وان تجمعوا بين الأختين - (النساء : ۲۳)
এবং দু'জন সহোদর বোনকে একত্রে স্ত্রীরূপে বরণ করা তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ ।
এভাবে যেসব মেয়েলোককে বিয়ে করা একজন পুরুষের পক্ষে হারাম তাদের সংখ্যা দাঁড়ালো নিম্নরূপঃ
(ক) বংশের ও রক্তের সম্পর্কের কারণে সাতজন। আর তারা হছেঃ মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি ও বোনঝি।
(খ) বৈবাহিক ও দুগ্ধপানের কারণে মোট সাতজন। তারা হচ্ছেঃ দুধ-মা, দুধ-বোন, স্ত্রীর মা, স্ত্রীর পূর্বপক্ষের কন্যা ও দুবোনকে একত্রে বিয়ে করা। এতদ্ব্যতীত পিতার স্ত্রী এবং ফুফু-ভাইঝিকে একত্রে বিয়ে করা হারাম।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। যেসব মেয়ে এবং পুরুষের পারস্পরিক বিয়ে হারাম এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url